Report Bangla

ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এক ভবনে চার প্রতিষ্ঠান: প্রশ্নে ‘রয়েল ইউনিভার্সিটি’, ক্যাম্পাসে ‘মমতাজ বেগম’!

একটি মাত্র ভবন আর সেখানেই গড়ে উঠেছে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংক। এত কিছু সম্ভব হয়েছে ক্ষমতার দাপটে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য এইচবিএম ইকবালের মালিকানাধীন এই একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার বাশঁগাড়ীতে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় আমাদের অনুসন্ধান।

ভবনটিতে রয়েছে জিল্লুর রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজ ও ডা. মমতাজ বেগম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যার পূর্ব নাম ছিল শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের বাঁশগাড়ি শাখা।

সরেজমিনে যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। বাশগাড়ির ওই ক্যাম্পাসে দেখা মেলে ভিন্ন এক চিত্র। ক্লাসে পরীক্ষা চলছে।  দায়িত্বরত শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সাংবাদিক পরিচয় জেনে ঘাবড়ে যান তিনি। ঐ শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্রিং সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তবে প্রশ্নপত্র যেন ভিন্ন কথা বলছে। কেননা ওই প্রশ্নপত্রে ডাক্তার মমতাজ বেগম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার নাম লেখা।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান দায়িত্বরত শিক্ষক। বলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাঙ্গে কথা বলতে।

সকল অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার জাকির হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনিও কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। আমাদের অনুসন্ধানী টিমকে অপেক্ষা করতে বলে তিনি চলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এর কক্ষে। সেখানে দীর্ঘ আলোচনা শেষে বাইরে এসে জানান  ভাইস চ্যান্সেলর কথা বলবেন।

একই ভবনে একাধিক প্রতিষ্ঠান কিভাবে সম্ভব তা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর আজিজুল হক। তাকে প্রশ্ন করা হয় আপনার এই ক্যাম্পাসে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান আছে কিনা?  তিনি বলেন, অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এখানে নেই। সেখানে গোপনে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার কার্যক্রম চলমান এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সেখানে চলে না। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত রয়েল ইউনিভার্সিটি এর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রয়েল ইউনিভার্সিটির মালিকানাও এইচবিএম ইকবালের নামে।

এরপর ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে চাইলে তিনি রেজিস্টার জাকির হোসেন কে বলেন আমাদের টিমকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখাতে। ক্যাম্পস ঘুরে দেখার একপর্যায়ে ওই পরীক্ষার কক্ষগুলো দূর থেকে দেখিয়ে রেজিস্টার বলেন, সেখানে পরীক্ষা চলছে। যেতে চাইলে তিনি পাশ কাটিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমাদের জোরাজুরিতে সেখানে যেতে বাধ্য হন তবে কক্ষে ঢুকতে দিতে ইতস্ত করলেও কক্ষে প্রবেশ করে প্রশ্ন হাতে নিতেই তিনি জোরপূর্বক তা হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। প্রশ্নপত্রে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার নাম কেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান, চেষ্টা করেন পাশ কাটিয়ে যেতে।

এর আগেই আমাদের কাছে তথ্য ছিল, ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকার ভর্তি কার্যক্রম চলতো। পুরো ভর্তি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন মতিউর রহমান ওরফে মতি নামক বাঁশগাড়ির এক স্থানীয় ব্যক্তি। মতি কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে   দ্রুত ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান। মতির বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি প্রফেসর ডক্টর আজিজুল হক ও রেজিস্টার জাকির হোসেন তাকে চিনেন না বলে জানান। তবে ঐদিন রেজিস্টার ও মতিকে একই কক্ষ থেকে বের হতে দেখা যায়।

পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বে  নাম ছিল শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে রাতারাতি পাল্টে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। শেখ হাসিনার জায়গায় বসানো হয় ইকবালের স্ত্রী ডা. মমতাজ বেগমের নাম।

এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয়ের করার নামে স্থানীয় ও হিন্দু পাড়ার কিছু সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল করা হয়েছে।

ভৈরবের বাশঁগাড়ি ঘুরে- রিপোর্ট বাংলা

আলোচিত সংবাদ

Scroll to Top
cropped-1000057997.jpg